হাড়কাঁপানো শীতেও অনড় শাহবাগ: শহীদ হাদির বিচারের দাবিতে গভীর রাত পর্যন্ত অবরোধ

shahbag blockade justice-for hadi

পৌষের হাড়কাঁপানো শীত ও গভীর রাতের ঘন অন্ধকার উপেক্ষা করে রাজধানীর শাহবাগ মোড়ে অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে জনমানুষ। শহীদ শরিফ ওসমান হাদির হত্যার বিচার দাবিতে নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে উত্তাল করে রেখেছেন শাহবাগ।

শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, কম্বল জড়িয়ে ও সামিয়ানা টানিয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা। চারপাশজুড়ে স্লোগানের প্রতিধ্বনি— ‘শাহবাগ না ইনসাফ’, ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘এক হাদির রক্ত থেকে লক্ষ হাদি জন্ম নেবে’।

ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পাশজুড়ে মানুষের ভিড় ও চারদিকে ব্যারিকেড দেখা যায়। মূল সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকলেও পাশের লেন দিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে।

রাজধানীর রামপুরা থেকে দুই শিশু সন্তান নিয়ে অবরোধে অংশ নিতে আসেন এক দম্পতি। আবেগভেজা কণ্ঠে মা উমায়ের কুলসুম আমার দেশকে বলেন, ‘হাদি ভাইয়ের কথা শুনলে ঘরে বসে থাকা যায় না। উনি বিচার চেয়ে ওসিয়ত করে গেছেন। আমরা কীভাবে ঘুমাব?’

তার পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ বলেন, ‘এই শীতে কষ্ট হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু বিচার না পেলে এই কষ্টের কোনো মানে নেই। আমরা আর কাউকে হারাতে চাই না।’

শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের জানান, রাত পেরিয়ে দিন এলেও অবরোধ চলবে। প্রয়োজনে দিন-রাত অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তিনি।

আব্দুল্লাহ আল জাবের বলেন, ‘হাদি ভাইয়ের বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ ছাড়ব না। কোনো আশ্বাসে কর্মসূচি শেষ হবে না। সর্বোচ্চ ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার শেষ করতে হবে। বিচার শুরু হলেই আমরা কর্মসূচি তুলে নেব।’

অবস্থানে অংশ নেওয়া অনেককে আবেগে কাঁদতে দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসিফ বলেন, ‘আজ যদি হাদির বিচার না হয়, কাল যে কেউ হাদি হতে পারে। আমরা তা হতে দিতে চাই না।’

এর আগে শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ইনকিলাব মঞ্চ। ভিসি চত্বর, টিএসসি ও শহীদ মিনার ঘুরে শাহবাগ মোড়ে এসে তারা অবস্থান নেন। এতে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেন।

এদিন ইনকিলাব মঞ্চ তাদের তিন দফা দাবি পুনর্ব্যক্ত করে। দাবিগুলো হলো— দ্রুত বিচারিক ট্রাইব্যুনাল গঠন করে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে বিচার সম্পন্ন করা, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করা এবং হত্যার দায় নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগ।

অবস্থানে থাকা এক নারী আন্দোলনকারী বলেন, ‘আমরা রাজনীতি বুঝি না। আমরা শুধু চাই—খুনের বিচার হোক। রাষ্ট্র যদি বিচার দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে জনগণ রাস্তায় নামবে।’

উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। পরবর্তীতে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।