সরকার পতনের ঠিক আগের রাতে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম নাটকীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ অধ্যায় রচিত হয়। ২০২৫ সালের ৪ আগস্ট রাতে গণভবনে একের পর এক গোপন বৈঠকে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে সিদ্ধান্ত নিতে ব্যর্থ হয় তৎকালীন সরকার। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছে যায় যে, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ, কূটনৈতিক চাপ এবং বিক্ষুব্ধ জনতার অব্যাহত চাপে পদত্যাগে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
❝আন্দোলন ঠেকাতে রক্তপাতেও রাজি ছিলেন❞
গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছিল, ৫ আগস্ট ঢাকার রাজপথে লাখ লাখ মানুষ নামবে, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। তারপরও ক্ষমতা ছাড়তে নারাজ শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে রক্তপাত ঘটিয়ে হলেও আন্দোলন দমন করতে নির্দেশ দেন। রাতভর বৈঠকে অংশ নেন তিন বাহিনীর প্রধান, আইজিপি, আইনমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিরা।
সেনাবাহিনীর সতর্কবার্তা ও ভারতীয় দূতাবাসে বার্তা
৪ আগস্ট রাত আড়াইটায় তৎকালীন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান একটি প্রভাবশালী দেশের দূতাবাসে শেখ হাসিনার পদত্যাগের বার্তা পৌঁছে দেন। সেনাপ্রধান, ডিজিএফআই প্রধানসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা ৫ আগস্ট ভোরে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেন।
জয় ওয়াজেদের সঙ্গে ফোনালাপের পরিণতি
সেনাপ্রধানদের চাপের মুখে শেখ হাসিনা যখনও পদত্যাগে অনীহা প্রকাশ করেন, তখন তাঁর ছেলে সজীব ওয়াজেদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন সামরিক কর্মকর্তারা। জয় মাকে বোঝান যে, সময় শেষ। এরপর শেখ হাসিনা পদত্যাগে সম্মত হন।
দেশত্যাগের নেপথ্য কাহিনি
৫ আগস্ট দুপুরে শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা কড়া নিরাপত্তায় বাণিজ্য মেলার মাঠে যান। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে কুর্মিটোলায় বঙ্গবন্ধু এয়ারবেইস, পরে বিমানবাহিনীর পরিবহন বিমানে ভারতের গাজিয়াবাদে হিন্দন এয়ারবেইসে অবতরণ করেন। ভারতীয় জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল তাঁকে গ্রহণ করেন।
ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে বিস্ফোরক তথ্য
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের শুনানিতে সাবেক আইজিপির জবানবন্দি, সামরিক কর্মকর্তার বর্ণনা এবং চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলামের উপস্থাপনায় উঠে আসে শেখ হাসিনার শেষ রাতের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। “গ্যাং অব ফোর” নামে পরিচিত চার শীর্ষ নেতা — ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান, আনিসুল হক ও সালমান এফ রহমান — শেখ হাসিনাকে কঠোর অবস্থানে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
৫ আগস্ট সকাল থেকে যখন লাখো মানুষ রাজধানী অভিমুখে এগিয়ে আসছিল, তখন সেনাবাহিনী গণভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয়। আইএসপিআর বিটিভিকে জানায়, বিকেল চারটায় সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে শেখ হাসিনার শাসনামল।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা এখন ভারতে অবস্থান করছেন। তাঁর একাধিক অডিও বার্তা সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, অনেক সাবেক মন্ত্রী-এমপি ভারত বা অন্যান্য দেশে পালিয়ে রয়েছে।