ঢাকার ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহিদ শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হামলাকারীর দুই সহযোগীকে ভারতে আটক করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (২৮ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, এই হত্যাকাণ্ডটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত। ঘটনার মূল সন্দেহভাজন ফয়সাল করিম ওরফে দাউদ খান বর্তমানে দেশে নেই; তিনি ভারতের মেঘালয়ে পালিয়ে গেছেন। ফয়সালকে পালাতে সহায়তার অভিযোগে পুত্তি ও স্বামী নামের তার দুই সহযোগীকে ভারতের মেঘালয়ে আটক করা হয়েছে।
ডিএমপি জানায়, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পুলিশ দ্রুত মামলার চার্জশিট দাখিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। আগামী ৭–১০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে এবং ৭ জানুয়ারির মধ্যে তা চূড়ান্ত করার লক্ষ্য রয়েছে।
তদন্তে পুলিশ দুটি বিদেশি পিস্তল, ৫২ রাউন্ড গুলি, একটি মোটরসাইকেল, ভুয়া নম্বর প্লেট এবং ৫৩টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২১৮ কোটি টাকার চেক উদ্ধার করেছে। তবে হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্য (মোটিভ) এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। পুলিশ জানায়, মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করা না গেলে মোটিভ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া কঠিন।
সংবাদ সম্মেলনে এস এন মো. নজরুল ইসলাম আরও বলেন, ভারতের মেঘালয় পুলিশের সঙ্গে ‘অনানুষ্ঠানিক চ্যানেলে’ যোগাযোগ করে ফয়সালের দুই সহযোগীকে আটক করা সম্ভব হয়েছে। মূল সন্দেহভাজন ফয়সালকেও দ্রুত গ্রেপ্তারের আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১২ ডিসেম্বর দুপুর আনুমানিক ২টা ২০ মিনিটে রাজধানীর পল্টন থানার বক্স কালভার্ট রোডে হামলার শিকার হন শরিফ ওসমান হাদি। মতিঝিল মসজিদে জুমার নামাজ শেষে প্রচারণা চালিয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যাওয়ার পথে মোটরসাইকেলে আসা প্রধান আসামি ফয়সাল করিম মাসুদ রাহুল ওরফে দাউদ এবং তার অজ্ঞাত পরিচয় সহযোগীরা চলন্ত অবস্থায় হাদিকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে ১৫ ডিসেম্বর তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৮ ডিসেম্বর রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এ ঘটনায় গত ১৪ ডিসেম্বর ইনকিলাব মঞ্চের সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল জাবের বাদী হয়ে পল্টন থানায় হত্যাচেষ্টার মামলা দায়ের করেন। পরে হাদির মৃত্যুর পর ২০ ডিসেম্বর আদালতের আদেশে মামলায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারা (হত্যা) সংযোজন করা হয়। এ আদেশ দেন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্দিক আজাদ।
