লামিন ইয়ামালের জাদুতে ফ্রান্সকে হারিয়ে ন্যাশনস লিগ ফাইনালে স্পেন

Spain vs France Lamine Yamal

স্পেনের কিশোর তারকা লামিন ইয়ামালের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে বৃহস্পতিবার রাতে জার্মানির স্টুটগার্টে অনুষ্ঠিত এক রোমাঞ্চকর সেমিফাইনালে ফ্রান্সকে ৫-৪ গোলে হারিয়ে টানা তৃতীয়বারের মতো ন্যাশনস লিগের ফাইনালে পৌঁছেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ হবে প্রতিবেশী পর্তুগাল।

স্টুটগার্টের এমএইচপি অ্যারেনায় প্রথমার্ধে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন স্পেন ঝলমলে ফুটবল উপহার দিয়ে ম্যাচের ২৫ মিনিটের মধ্যেই নিকো উইলিয়ামস ও মিকেল মেরিনোর দারুণ দুটি গোলে ২-০ গোলের লিড নেয়।

দ্বিতীয়ার্ধের ৫৪ মিনিটে স্পট কিক থেকে ম্যাচে নিজের প্রথম গোল করেন ১৭ বছর বয়সী ইয়ামাল। এর এক মিনিট পরেই বার্সেলোনা সতীর্থ পেদ্রি করেন চতুর্থ গোল। ম্যাচটি হয়ে ওঠে এক তরুণ ফুটবল প্রতিভার প্রদর্শনী।

এই ম্যাচটিকে ধরা হচ্ছিল ভবিষ্যতের ব্যালন ডি’অর লড়াইয়ের পূর্বাভাস হিসেবে। তবে পিএসজির চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের ক্লান্তি যেন ফরাসি শিবিরে স্পষ্টভাবে প্রভাব ফেলে। দেজিরে ডোয়ে ও উসমান ডেম্বেলেদের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক।

তবুও কিলিয়ান এমবাপ্পে পেনাল্টি থেকে একটি গোল করে ব্যবধান কমান, কিন্তু ইয়ামাল আবারও জ্বলে ওঠেন এবং ৬৭ মিনিটে নিজের দ্বিতীয় ও দলের পঞ্চম গোলটি করে ম্যাচে স্পেনকে অনেকটাই এগিয়ে দেন।

তবে ফ্রান্সও হাল ছাড়েনি। রায়ান চেরকির দূরপাল্লার গর্জন, দানি ভিভিয়ানের আত্মঘাতী গোল এবং কলো মুয়ানির শেষ মুহূর্তের গোলে উত্তেজনার পারদ চূড়ায় ওঠে। শেষদিকে অতিরিক্ত সময়ের সম্ভাবনা দেখা দিলেও স্পেন শেষ পর্যন্ত লিড ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

ইয়ামাল ম্যাচ শেষে বলেন, “আমি সব সময় আমার মাকে বলি, আমি মাঠে সবটুকু দিয়ে দিই। এটাই আমাকে অনুপ্রাণিত করে। ফ্রান্সের খেলোয়াড়রা বিশ্বমানের। স্কোরলাইন বড় হলেও তারা আমাদের ভোগাতে পেরেছে।”

তিনি আরও বলেন, “স্পেন এবং পর্তুগাল—দুটি শক্তিশালী দল। সেরা দলটাই জিতবে। আমি চাই শিরোপা স্পেনে নিয়ে আসতে।”

কোচ লুইস দে লা ফুয়েন্তের অধীনে স্পেন গত দুই বছরে মাত্র একবার হেরেছে। তার কৌশলে উইং থেকে নিকো উইলিয়ামস ও ইয়ামালের গতিময় খেলাই মূল চাবিকাঠি। শুরুতেই এমবাপ্পের সুযোগ নষ্ট এবং থিও হার্নান্দেজের শট ক্রসবারে লাগার পর উইলিয়ামস গোল করে এগিয়ে নেন দলকে।

মাত্র তিন মিনিট পর মেরিনো করেন দ্বিতীয় গোল। এই প্রথম ফ্রান্স কোচ দিদিয়ার দেশঁর ১৩ বছরের মেয়াদে দ্বিতীয়বারের মতো ৩০ মিনিটের মধ্যে দুটি গোল হজম করল তার দল।

শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চকর এই সেমিফাইনাল জাতীয় লিগের ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলসংখ্যার (৯টি) ম্যাচে পরিণত হয়। একই সঙ্গে ১৯৬৯ সালের পর এই প্রথম কোনো ম্যাচে ফ্রান্স পাঁচটি গোল হজম করল।

ম্যাচ শেষে ফ্রান্স অধিনায়ক এমবাপ্পে বলেন, “আমরা কিছু ভালো মুহূর্ত তৈরি করেছিলাম, কিন্তু ১০ মিনিটে দুটি গোল খাওয়া আমাদের পিছিয়ে দেয়। ধারাবাহিকতা ছিল না, তবে আমরা উন্নতি করেছি।”

আসছে রোববার ফাইনালে ইবেরিয়ান দ্বৈরথ: স্পেন বনাম পর্তুগাল। ফুটবলপ্রেমীদের জন্য অপেক্ষা করছে আরেকটি জমজমাট মহারণ।