আধুনিক বিশ্বায়নের অগ্রগতির পথে তথ্যপ্রযুক্তি এক অবিচ্ছেদ্য শক্তি হিসেবে ভূমিকা রাখছে। এই শক্তিকে ঘিরে বিশ্বজুড়ে স্টার্ট-আপ এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো উদ্ভাবনের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে। তারই প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে পর্তুগালের লিসবনে শুরু হওয়া বিশ্ব তথ্যপ্রযুক্তি সম্মেলনে, যা চলবে সপ্তাহব্যাপী। সোমবার (১১ নভেম্বর) থেকে শুরু হওয়া এই সম্মেলনটি প্রযুক্তি বিশ্বে উদ্ভাবনী ধারণা ও সমাধান প্রদর্শনের একটি অন্যতম বৃহৎ মঞ্চ। এবারের সম্মেলনে অংশ নিয়েছে ৩ হাজারেরও বেশি স্টার্ট-আপ, যার মধ্যে ১২০০ স্টার্ট-আপ নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী উদ্যোক্তারা। নারী নেতৃত্বের এই অংশগ্রহণ প্রযুক্তি খাতে বৈচিত্র্যের প্রতিফলন ঘটিয়েছে এবং নতুন প্রজন্মের উদ্যোক্তাদের জন্য অনুপ্রেরণার যোগান দিচ্ছে। এবারের সম্মেলনটি কেবল প্রযুক্তির বড় বড় কোম্পানির জন্যই নয়, বরং নতুন ও উদ্ভাবনী স্টার্ট-আপদের জন্যও একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে।
আইবিএম, এডোবি, মেটা (ফেসবুক), আলিবাবা এবং ভিসার মতো বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এই সম্মেলনের পার্টনার হিসেবে যুক্ত হয়েছে। তারা তাদের নতুন প্রযুক্তি, পণ্য ও পরিষেবা প্রদর্শনের পাশাপাশি বিভিন্ন স্টার্ট-আপ থেকে শিখতে এবং নিজেদের ভবিষ্যত কৌশল নির্ধারণে অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর এই সংযোগ প্রযুক্তির ভবিষ্যত দিক নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এই সম্মেলনে বক্তব্য প্রদান করছেন বিশ্বের প্রখ্যাত ব্যক্তিত্বরা। মাইক্রোসফটের প্রেসিডেন্ট ব্রাড স্মিথ, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের প্রতিষ্ঠাতা স্যার টিম বার্নার্স লি, ম্যাসাচুসেটস বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক উইলিয়াম লাজনিক এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাবের প্রধান কর্মকর্তা ওমর বাড়াডার মতো খ্যাতনামা ব্যক্তিরা উপস্থিত থেকে তাদের অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি শেয়ার করছেন। এছাড়া ভিসার সিএমও ফ্রান্ক কুপার এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রের সেরা কনটেন্ট ক্রিয়েটররা এই সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সঙ্গে শিক্ষা, সংস্কৃতি এবং ইতিহাসের সংমিশ্রণ ঘটানোর গুরুত্ব তুলে ধরছেন।
এই সম্মেলনটিতে অংশগ্রহণ করেছে চল্লিশটি দেশের রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক প্রতিনিধিদল, যারা তাদের নিজস্ব স্টার্ট-আপ এবং প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রতিনিধিত্ব করছে। এই প্রতিনিধিদলসমূহের উপস্থিতি বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তি খাতে আন্তঃসম্পর্ক তৈরিতে একটি শক্তিশালী ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া ইউরোপিয়ান ইউনিয়নও সম্মেলনে সক্রিয়ভাবে যুক্ত, যা ইউরোপের প্রযুক্তি খাতকে আরও শক্তিশালী করার পথে নতুন সম্ভাবনা উন্মোচন করছে।
এক কথায়, এই সম্মেলনটি প্রযুক্তি জগতে এক বৃহৎ মেলায় পরিণত হয়েছে। ব্যক্তি থেকে রাষ্ট্র পর্যন্ত প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা একত্রিত হয়ে উদ্ভাবন, তথ্যপ্রযুক্তি সমস্যা সমাধান এবং ভবিষ্যত প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের কৌশল নিয়ে আলোচনা করছেন।
এই সম্মেলন বিশ্ব প্রযুক্তি খাতে উদ্ভাবনের গতি ত্বরান্বিত করবে এবং প্রযুক্তির শক্তিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।