মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জন্মগত নাগরিকত্ব (বার্থরাইট সিটিজেনশিপ) বাতিলের ঘোষণা দিয়েছেন। সোমবার এক নির্বাহী আদেশে তিনি এই নীতির সংজ্ঞা পুনর্নির্ধারণের জন্য স্বাক্ষর করেন। যদিও এই আদেশের সুনির্দিষ্ট বিবরণ এখনো প্রকাশ করা হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সিদ্ধান্ত আদালতে বড় ধরনের আইনি চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।
জন্মগত নাগরিকত্ব হলো এমন একটি নীতি, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী যে কেউ স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকত্ব পান। এটি মার্কিন সংবিধানের ১৪তম সংশোধনীতে অন্তর্ভুক্ত। তবে ট্রাম্প দাবি করেছেন, এই নীতিটি অবৈধ অভিবাসন উত্সাহিত করছে।
ট্রাম্পের এই আদেশের পরপরই আমেরিকান সিভিল লিবার্টিস ইউনিয়ন (এসিএলইউ) সহ একাধিক মানবাধিকার সংগঠন আদালতে মামলা দায়ের করেছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রেসিডেন্ট কেবল নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই নীতিটি বাতিল করতে পারেন না। এটি পরিবর্তন করতে হলে সাংবিধানিক সংশোধনীর প্রয়োজন হবে।
ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবিধান বিশেষজ্ঞ সাইকৃষ্ণ প্রকাশ বলেন, “ট্রাম্পের এই উদ্যোগ আদালতে বছরের পর বছর ধরে চলতে পারে। সংবিধানের একটি সংবিধানিক সংশোধনী ছাড়া এটি কার্যকর হওয়া সম্ভব নয়।”
১৪তম সংশোধনী ১৮৬৮ সালে গৃহীত হয়, যা মুক্তদাসদের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার জন্য প্রণীত হয়েছিল। এর আগে, ১৮৯৮ সালের Wong Kim Ark বনাম United States মামলায় সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী অভিবাসীদের সন্তানরাও নাগরিকত্ব পাবেন।
পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে প্রায় ২.৫ লাখ শিশু অবৈধ অভিবাসী পিতামাতার ঘরে জন্মগ্রহণ করেছে। ট্রাম্পের প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ২০৫০ সালের মধ্যে অনুমোদনহীন অভিবাসীর সংখ্যা ৪.৭ মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা পূর্বাভাস দিয়েছেন।
জন্মগত নাগরিকত্ব শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, কানাডা, মেক্সিকো এবং মালয়েশিয়ার মতো আরও ৩০টি দেশে স্বয়ংক্রিয়ভাবে প্রদান করা হয়। তবে যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার মতো কিছু দেশে এই নীতি পিতামাতার নাগরিকত্বের ওপর নির্ভরশীল।
ট্রাম্পের এই উদ্যোগে মার্কিন রাজনীতি ও সমাজে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। আইনি প্রক্রিয়া এবং সাংবিধানিক জটিলতার কারণে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব হবে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই সিদ্ধান্ত অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত বহন করছে।