যুক্তরাজ্যের নতুন অভিবাসন নীতিমালা: কঠোর শর্তে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে লেবার পার্টি

UK New immigration policy labour party

যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টি সরকার নতুন অভিবাসন নীতিমালার ঘোষণা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই নীতিকে ‘সীমান্তের ওপর নিয়ন্ত্রণ পুনঃপ্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

নতুন নীতিমালার মূল লক্ষ্য যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের হার কমানো এবং সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করা। এর অন্যতম প্রধান পরিবর্তন হচ্ছে, স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য যোগ্যতা অর্জনের সময়সীমা দ্বিগুণ করে ১০ বছর করা হয়েছে। পূর্ববর্তী নিয়মে এটি ছিল ৫ বছর।

ইংরেজি ভাষা ও অপরাধ সংক্রান্ত কঠোরতা

এই নীতিমালায় ইংরেজি ভাষায় দক্ষতার প্রমাণকেও বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। পোষ্য কোটায় অভিবাসনপ্রত্যাশী প্রাপ্তবয়স্কদেরও ইংরেজি ভাষার প্রাথমিক জ্ঞান থাকতে হবে। স্টারমার বলেন, “যারা আমাদের দেশে আসবে, তাদের আমাদের সমাজের অংশ হতে হবে এবং আমাদের ভাষা শিখতে হবে।”

ফৌজদারি অপরাধের ক্ষেত্রেও কঠোরতা আনা হয়েছে। এখন থেকে শুধু কারাদণ্ড নয়, বরং যেকোনো বিদেশি নাগরিক যুক্তরাজ্যে অপরাধ করলে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ভেট কুপার জানান, “বিদেশি অপরাধীদের দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থাকে কার্যকর এবং কঠোর করা হবে।”

কম দক্ষ শ্রমিকদের ভিসায় কড়াকড়ি

নতুন নীতিমালায় কম দক্ষ শ্রমিকদের জন্য যুক্তরাজ্যে প্রবেশ কঠিন করা হয়েছে। কুপার জানিয়েছেন, ২০২৫ সালে কম দক্ষ কর্মীদের জন্য ৫০ হাজার ভিসা কমানো হবে। এছাড়া, বিদেশি কর্মীদের অবশ্যই চাকরির জন্য প্রাসঙ্গিক ডিগ্রি থাকতে হবে।

তবে উচ্চ দক্ষতার পেশাজীবীদের জন্য, যেমন ডাক্তার, নার্স, প্রকৌশলী ও এআই বিশেষজ্ঞদের জন্য দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়া চালু রাখা হবে। এই বিষয়ে সরকারের বক্তব্য, “আইন মেনে যারা দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারেন, তাদের জন্য দ্বার খোলা থাকবে।”

বিশ্লেষকদের মতে, কট্টর ডানপন্থী দলগুলোর ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার মুখে লেবার পার্টি এই কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে। সদ্যসমাপ্ত স্থানীয় নির্বাচনে অভিবাসনবিরোধী রিফর্ম পার্টির শক্তিশালী ফলাফল লেবারকে চাপে ফেলে।

স্টারমার বলেন, “সীমান্ত উন্মুক্ত পরীক্ষার অবসান চাই আমরা। আগের সরকারের ভুল নীতির কারণে অভিবাসীর সংখ্যা ১০ লাখের বেশি বেড়েছিল। আমরা এখন তা ফিরিয়ে আনতে প্রস্তুত।”

সরকার জানিয়েছে, গত জুলাই থেকে অভিবাসন আইন ভঙ্গকারী ২৪ হাজার মানুষকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এএফপি জানিয়েছে, সরকারের নতুন অভিবাসন বিষয়ক শ্বেতপত্র আজ পার্লামেন্টে উপস্থাপিত হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই নীতিমালার মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে অভিবাসনের ভবিষ্যৎ চিত্র নাটকীয়ভাবে বদলে যেতে পারে। তবে এর প্রভাব কতটা ইতিবাচক হবে, তা সময়ই বলে দেবে।