বাধ্যতামূলক ইংরেজি দক্ষতা পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া সত্ত্বেও হাজার হাজার অভিবাসীকে ব্রিটেন ভিসা দিয়েছে—এমন তথ্য উঠে এসেছে দ্য টেলিগ্রাফ-এর অনুসন্ধানে। ব্রিটিশ কাউন্সিল পরিচালিত পরীক্ষায় বড় ধরনের ফলাফলের ভুলের কারণে প্রায় ৮০ হাজার পরীক্ষার্থী ভুল ফল পেয়েছেন, যার মধ্যে অনেকেই ফেল করেও পাস হিসেবে দেখানো হয়েছে।
এদিকে চীন, বাংলাদেশ ও ভিয়েতনামে প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির প্রমাণও মিলেছে। অপরাধীচক্র পরীক্ষার প্রশ্নপত্র আগেভাগে বিক্রি করত, ফলে ভিসা পাওয়ার অনুপযুক্ত বহু ছাত্র, এনএইচএস কর্মী ও অন্যান্য অভিবাসী সহজেই যুক্তরাজ্যের ভিসা পেয়ে গেছেন।
এই কেলেঙ্কারি প্রকাশ্যে আসার পর কনজারভেটিভ পার্টি দাবি জানিয়েছে—যারা ইংরেজি পরীক্ষায় পাস না করেও ভিসা পেয়েছেন, তাদের যুক্তরাজ্য থেকে বের করে দিতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ টেস্টিং সিস্টেম (আইইএলটিএস) পরিচালনা করে ব্রিটিশ কাউন্সিল, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস অ্যান্ড অ্যাসেসমেন্ট এবং আইডিপি। প্রতিবছর সারা বিশ্বে প্রায় ৩৬ লাখ মানুষ এই পরীক্ষায় অংশ নেন।
২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অনুষ্ঠিত পরীক্ষাগুলোর মধ্যে “প্রযুক্তিগত সমস্যার” কারণে লিসেনিং ও রিডিং-এর কিছু অংশে ভুল মার্কিং হয়। আইইএলটিএস কর্তৃপক্ষ দাবি করছে—এটি মোট পরীক্ষার মাত্র ১ শতাংশের মতো, যা বাস্তবে প্রায় ৭৮ হাজার পরীক্ষার্থী।
এ ঘটনাটি কয়েক সপ্তাহ আগে ধরা পড়ে, এবং আইইএলটিএস কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নতুন ফলাফল পাঠায় ও ক্ষমা চায়।
বলা হচ্ছে, কিছু পরীক্ষার্থীর নম্বর তাদের প্রকৃত স্কোরের চেয়ে বেশি দেখানো হয়েছিল, আবার অনেকের স্কোর কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সমস্যা সনাক্ত হতে দেরি হওয়ায় ভুল ফল পাওয়া বহু ব্যক্তি ইতিমধ্যেই যুক্তরাজ্যের ভিসা পেয়ে গেছেন।
গত বছর ইউনিভার্সিটি অ্যান্ড কলেজ ইউনিয়ন জানিয়েছিল—অনেক বিশ্ববিদ্যালয় অতিরিক্ত টিউশন ফি পাওয়ার আশায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের দুর্বল ইংরেজি দক্ষতা উপেক্ষা করছে। কিছু শিক্ষক দাবি করেছেন—বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রায় ৭০ শতাংশই প্রয়োজনীয় ইংরেজি দক্ষতা অর্জন করেননি।
এনএইচএসের চিকিৎসকেরাও সতর্ক করেছেন—চিকিৎসা ও সেবাখাতে ইংরেজি ভাষা না–জানা কর্মীর সংখ্যা বিপজ্জনকভাবে বেশি, যা রোগীর নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এক ঘটনায় দেখা যায়, একজন কেয়ার ওয়ার্কার যিনি কখনো ইংরেজি পরীক্ষা দেননি, তিনি জরুরি সেবায় ফোন করার সময় “breathing” (শ্বাস নেওয়া) আর “bleeding” (রক্তপাত) শব্দের পার্থক্য বুঝতে পারেননি—যা মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল।
রাজনীতিকদের তীব্র প্রতিক্রিয়া
কনজারভেটিভ দলের শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ক্রিস ফিলপ বলেন: “ইংল্যান্ড ও ওয়েলস মিলিয়ে প্রায় দশ লাখ মানুষ ইংরেজি বলতে পারে না বা খুব কম জানে। এর মধ্যেই যদি ৭৮ হাজার মানুষ ভুল ফল পেয়ে ভিসা নিয়ে থাকে, তাহলে তাদের অবশ্যই অপসারণ করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ইংরেজি না জানলে কেউ সমাজে একীভূত হতে পারে না। এটি একটি ভয়াবহ ব্যর্থতা।”
আইইএলটিএস প্রশ্নপত্র আগেভাগে বিক্রির জালিয়াতি চক্র নিয়ে তদন্তে উঠে আসে—
- বাংলাদেশে পুলিশ দুইজনকে গ্রেপ্তার করে, যারা ১,০০০ থেকে ২,৫০০ পাউন্ডের বিনিময়ে প্রশ্নপত্র বিক্রি করত।
- ভিয়েতনামে ব্রিটিশ কাউন্সিল ফাঁসের আশঙ্কায় শেষ মুহূর্তে নির্ধারিত পরীক্ষা বাতিল করে ব্যাকআপ পরীক্ষায় পরিবর্তন করে।
- চীনেও প্রশ্নফাঁস ও জালিয়াতির প্রমাণ মিলেছে।
এসব কারণেই কিছু বিশ্ববিদ্যালয় Bangladesh ও Pakistan থেকে শিক্ষার্থী ভর্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।
ব্রিটিশ কাউন্সিল কোভিড–১৯ সময়কার সরকারি ঋণের ১৯৭ মিলিয়ন পাউন্ড দেনা এখনো শোধ করতে পারেনি। ভুল ফলাফল কেলেঙ্কারি নিয়ে ক্ষতিপূরণের মামলা হলে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে।
একই সময়ে যুক্তরাজ্যের হোম অফিস ইংরেজি পরীক্ষা পরিচালনার জন্য নতুন পাঁচ বছরের ৮১৬ মিলিয়ন পাউন্ডের চুক্তি প্রক্রিয়ায় রয়েছে, যেখানে ব্রিটিশ কাউন্সিলকে অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে।
আইইএলটিএস কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া —
“২০২৩ সালের আগস্ট থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুব সীমিত সংখ্যক পরীক্ষায় ভুল ফলাফল দেওয়া হয়েছিল। ৯৯ শতাংশ পরীক্ষাই প্রভাবিত হয়নি।” প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতিগ্রস্ত পরীক্ষার্থীদের প্রতি দুঃখ প্রকাশ করে জানিয়েছে—“আমরা সংশ্লিষ্ট সব অংশীদার ও কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কাজ করছি এবং এমন ঘটনা পুনরায় না ঘটতে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছি।”
