যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে অবস্থানের অভিযোগে ফেরত পাঠানো আরও ৩৯ বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। শনিবার (২ আগস্ট) সকালে ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় চার্টার্ড ফ্লাইটে তাদের বহনকারী বিমান। ইমিগ্রেশন পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রত্যাবাসিতদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এর আগে শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কনস্যুলার ও কল্যাণ অনুবিভাগ জানায়, মার্কিন সামরিক বাহিনীর একটি বিমানে করে ৬১ বাংলাদেশিকে দেশে পাঠানোর কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ৩৯ জন বাংলাদেশি দেশে ফেরেন।
ফেরত আসা বাংলাদেশিদের মধ্যে রয়েছেন নোয়াখালীর যুবক শাহাদাত। তিনি জানান, ২০২৪ সালের জুনে ব্রাজিলের ভিজিট ভিসায় দেশ ত্যাগ করেন। এরপর দুবাই ট্রানজিট হয়ে পৌঁছান ব্রাজিল। সেখান থেকে দালালের সহায়তায় সড়কপথে একে একে পাড়ি জমান বলিভিয়া, পেরু, ইকুয়েডর, কলাম্বিয়া, পানামা, কোস্টারিকা, নিকারাগুয়া, হন্ডুরাস, গুয়েতেমালা ও মেক্সিকো। তার সঙ্গে ছিলেন আরও ছয় বাংলাদেশি।
শাহাদাত বলেন, “প্রতিটি দেশেই দালালের লোক আগে থেকেই প্রস্তুত ছিল। কোথাও দেরি হলে আমরা ফোন করলেই কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এসে হাজির হতো। মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ৭-৮ মাস পর আমরা আটক হই।”
তিনি আরও বলেন, “সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী হলেও শেষ পর্যন্ত স্বপ্নটা ভেঙে গেছে। আমরা ভেবেছিলাম আইনি লড়াই করে টিকে থাকতে পারব, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসনের কড়াকড়িতে সেটা আর সম্ভব হয়নি।”
ফেরত আসা আরেকজন নোয়াখালীর যুবক রতন মণ্ডল। দীর্ঘ পাঁচ বছর দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্যবসা করে সচ্ছল জীবন যাপন করলেও উন্নত জীবনের আশায় পড়ে যান দালালের ফাঁদে। ঘানার এক দালালের কাছে তুলে দেন ৪০ লাখ টাকা।
রতন জানান, “প্রথমে আমাকে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ব্রাজিল পাঠানো হয়। এরপর শাহাদাতদের মতো একই রুটে ১১টি দেশ ঘুরে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছাই। প্রতিটি দেশের দালালকে আলাদাভাবে টাকা দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৫০ লাখ টাকা।”
তিনি বলেন, “প্রত্যেক দেশে পৌঁছেই হোয়াটসঅ্যাপে নতুন দালালের ছবি ও কনট্যাক্ট নাম্বার পাঠাতো সিন্ডিকেট। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেই এগিয়ে যেতাম। শেষ পর্যন্ত সব আশা ভেঙে গেল।”
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন থেকে শুরু হওয়া অবৈধ অভিবাসনবিরোধী কঠোর নীতির ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত অনেক বাংলাদেশিকেই দেশে ফিরতে হচ্ছে। এর আগে বিভিন্ন সময় আরও ১১৮ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।