যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে শিক্ষার্থী ভর্তির আবেদন স্থগিত বা সীমিত করেছে। ভিসার অপব্যবহার ও ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এমন পদক্ষেপ নিয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমস আজ এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তত নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় ‘উচ্চ ঝুঁকির দেশ’ থেকে ভর্তি গ্রহণে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন সম্প্রতি বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ বাড়ছে। দেশের সীমান্ত নিরাপত্তামন্ত্রী ডেম অ্যাঞ্জেলা ইগল বলেন, শিক্ষার্থী ভিসাকে ব্রিটেনে ‘স্থায়ী হওয়ার পেছনের দরজা’ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।
ভর্তি স্থগিত বা বাতিল করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার, উলভারহ্যাম্পটন, ইস্ট লন্ডন, সান্ডারল্যান্ড, কভেন্ট্রি, লন্ডন মেট্রোপলিটন, হার্টফোর্ডশায়ার ও অক্সফোর্ড ব্রুকস। কোথাও সরাসরি নিষেধাজ্ঞার কথা বলা না হলেও বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের শিক্ষার্থীরা CAS লেটার পাচ্ছেন না বা আবেদন গ্রহণই বন্ধ রাখা হয়েছে।
ইউনিভার্সিটি অব চেস্টার জানিয়েছে, পাকিস্তান থেকে অপ্রত্যাশিতভাবে ভিসা প্রত্যাখ্যান বেড়ে যাওয়ায় তারা আগামী অটাম পর্যন্ত ভর্তি স্থগিত করেছে। উলভারহ্যাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে স্নাতকে ভর্তি গ্রহণ বন্ধ রেখেছে। হার্টফোর্ডশায়ার বিশ্ববিদ্যালয় ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দুই দেশ থেকেই ভর্তি স্থগিত করেছে। লন্ডন মেট্রোপলিটন বিশ্ববিদ্যালয় বলেছে, তাদের ভিসা নাকচ হওয়া শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশই বাংলাদেশি।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এ সতর্কতার কেন্দ্রেই রয়েছে যুক্তরাজ্যের নতুন ভিসা কমপ্লায়েন্স নীতি। গত সেপ্টেম্বরে কার্যকর হওয়া এ নীতিতে বলা হয়, কোনো প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ভিসা আবেদন প্রত্যাখ্যানের হার ৫ শতাংশের বেশি হলে তাদের স্পনসর লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল হতে পারে। আগে এ সীমা ছিল ১০ শতাংশ।
হোম অফিসের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভিসা প্রত্যাখ্যানের হার ২২ শতাংশ এবং পাকিস্তান থেকে ১৮ শতাংশ। মোট যেসব ছাত্র ভিসা আবেদন নাকচ হয়েছে, তার অর্ধেকই দুই দেশের শিক্ষার্থীদের।
পাকিস্তানে শিক্ষার্থী সহায়তা প্রতিষ্ঠান অ্যাডভান্স অ্যাডভাইজর্সের প্রতিষ্ঠাতা মরিয়ম আব্বাস বলেন, শেষ মুহূর্তে প্রকৃত শিক্ষার্থীরা আটকে যাচ্ছে, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। যুক্তরাজ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল অ্যাডমিশনের জ্যেষ্ঠ কনসালট্যান্ট মো. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, অনেক শিক্ষার্থী কোর্স শেষ না করে আশ্রয় আবেদন বা ভিসা পরিবর্তন করায় যুক্তরাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন আরও সতর্ক হয়েছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের উচিত যুক্তরাজ্যের ছাত্র ভিসাকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার না করে সঠিকভাবে তাদের কোর্স সম্পন্ন করা।
