ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বোমা হামলার পরপরই দেশটির কংগ্রেসে শুরু হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেটিক আইনপ্রণেতারা এই হামলাকে কেন্দ্র করে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজনকে আবারও স্পষ্ট করে তুলেছে।
সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির চেয়ারম্যান রজার উইকার (মিসিসিপির রিপাবলিকান) হামলাটিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এটি সফল অভিযান হলেও, এখন যুক্তরাষ্ট্রের সামনে রয়েছে অত্যন্ত গুরুতর সিদ্ধান্ত।”
সিনেট ফরেন রিলেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান জিম রিশ (আইডাহোর রিপাবলিকান) বলেন, “এই যুদ্ধ ইসরায়েলের, যুক্তরাষ্ট্রের নয়। তবে ইসরায়েল আমাদের অন্যতম ঘনিষ্ঠ মিত্র। তারা ইরানকে নিরস্ত্র করে বিশ্বের উপকার করছে।” তিনি যোগ করেন, “এটা কোনো দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের সূচনা নয়। ইরানে কোনো মার্কিন সেনা মোতায়েন হবে না।”
হাউজ স্পিকার মাইক জনসন (লুইজিয়ানার রিপাবলিকান) বলেন, “প্রেসিডেন্ট ইরানকে চুক্তির সুযোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু তারা পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণে অঙ্গীকার করেনি। এই কঠোর পদক্ষেপ বিশ্বকে সর্বনাশা অস্ত্র থেকে রক্ষা করবে।”
সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা জন থুন (সাউথ ডাকোটার রিপাবলিকান) সংক্ষেপে জানান, “আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পাশে আছি।”
ডেমোক্রেটদের সমালোচনা: ‘সংবিধান লঙ্ঘন ও যুদ্ধের পথে বিপজ্জনক পদক্ষেপ’
অপরদিকে, ডেমোক্র্যাটদের নেতারা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই একতরফা পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছেন।
হাউজ ডেমোক্রেটিক নেতা হাকিম জেফরিস বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কংগ্রেসের অনুমতি না নিয়ে যুদ্ধের পথে গিয়ে দেশের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিনি যদি যুদ্ধের জালে দেশকে জড়িয়ে ফেলেন, তার সমস্ত দায়ভার তাকেই নিতে হবে।”
কংগ্রেস সদস্য আলেক্সান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ (নিউ ইয়র্কের ডেমোক্র্যাট) বলেন, “এই সিদ্ধান্ত সাংবিধানিক লঙ্ঘন। প্রেসিডেন্ট যে আচরণ করেছেন, তা স্পষ্টভাবে ইমপিচমেন্টের উপযুক্ত।”
রাশিদা তালিব (মিশিগানের ডেমোক্র্যাট ও ফিলিস্তিনি অভিবাসীদের সন্তান) বলেন, “কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া ইরানে বোমা হামলা চালিয়ে প্রেসিডেন্ট স্পষ্টভাবে সংবিধান ভঙ্গ করেছেন। আমেরিকান জনগণ আর কোনো চিরস্থায়ী যুদ্ধ চায় না।”
সিনেটর টিম কেইন (ভার্জিনিয়ার ডেমোক্র্যাট) বলেন, “মার্কিন জনগণ ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিপক্ষে। প্রেসিডেন্ট যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা চরম ভুল।”
সাবেক কংগ্রেস সদস্য ও এখন ‘VoteVets’ নামে এক প্রগ্রেসিভ ভেটেরান সংগঠনের উপদেষ্টা ম্যাক্স রোজ বলেন, “কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়াই প্রেসিডেন্টের ইরানে হামলার সিদ্ধান্ত অবৈধ। এর সম্পূর্ণ দায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান সমর্থকদের নিতে হবে।”
কেন্টাকির রিপাবলিকান প্রতিনিধি থমাস ম্যাসি বলেন, “এটি সাংবিধানিক নয়।” তার মতে, বিদেশে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা কেবল কংগ্রেসের রয়েছে।
এই হামলার মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন একদিকে আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করলেও, দেশের ভেতরে আরও একবার রাজনৈতিক বিভাজনকে উস্কে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এখন দেখার বিষয়, পরবর্তী পদক্ষেপ কী নেয় হোয়াইট হাউস এবং কংগ্রেস।