পর্তুগালের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা SNS (Serviço Nacional de Saúde)-এর সেবায় সম্প্রতি ব্যাপক ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যাচ্ছে না, হেলথ সেন্টারগুলোতে দীর্ঘ লাইনের ভেতর অপেক্ষা করতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, আবার অনেক এলাকায় ফ্যামিলি ডাক্তারই নেই—এসব সমস্যায় চরম হতাশ রোগীরা।
ডাক্তার নেই, অথচ জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন
বিভিন্ন শহরে বসবাসরত প্রবাসীরা জানান, SNS নম্বর থাকলেও তারা নিয়মিত চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। বিশেষ করে নতুন অভিবাসীরা যাদের বাসার ঠিকানাভিত্তিক ফ্যামিলি ডাক্তার এখনও নির্ধারিত হয়নি, তারা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন।
লিসবনের একটি হেলথ সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, বহু মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। একজন প্রবাসী বলেন,
“সকাল ৭টা থেকে দাঁড়িয়ে আছি, এখন ১১টা বাজে—তাও বলতে পারছে না কখন দেখা হবে।”
পর্তুগালে ছয় বছর বসবাসের পর একজন প্রবাসী নাগরিক দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শুধুমাত্র সেখানকার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার কারণে। সম্প্রতি একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করে তিনি জানান, গত সপ্তাহান্তে তিনি প্রচণ্ড পিঠের ব্যথায় ভুগছিলেন—চলাফেরা পর্যন্ত করতে পারছিলেন না।
অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তিনি অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন এবং কাছাকাছি একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু সেখানে পৌঁছানোর পর শুরু হয় আরেক ভোগান্তি। সাত ঘন্টা ত্রিশ মিনিট হাসপাতালে কাটানোর পরও তিনি একজন ডাক্তারের দেখা পাননি।
তিনি জানান, “আমি ভীষণ যন্ত্রণায় ছিলাম। হাসপাতালের কর্মীদের কাছে বারবার ব্যথানাশক ওষুধ চাইলেও কেউ পাত্তা দেয়নি। তারা শুধু বলেছে, আগে ডাক্তারকে দেখাতে হবে।”
অবশেষে অসহ্য হয়ে নিজেই একজন চিকিৎসকের কক্ষে গিয়ে জিজ্ঞেস করেন, আর কতজন রোগী বাকি আছে। জবাবে চিকিৎসক জানান, এখনো আরও ১০ জন রোগী তার আগে রয়েছেন। তখন হতাশ হয়ে তিনি বাড়ি ফিরে যান।
পরদিন বাধ্য হয়ে তিনি একটি বেসরকারি হাসপাতালে যান এবং সেখানে উপযুক্ত চিকিৎসা পান, যদিও এর জন্য তাকে “অত্যন্ত বেশি অর্থ” গুণতে হয়েছে।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি প্রতি মাসে প্রায় ৪০০ ইউরো সোশ্যাল সিকিউরিটিতে দিই। সব ট্যাক্স পরিশোধ করি। তারপরও যখন এমন আচরণ পাই, তখন মনে হয় আর থাকা যায় না। এটা কি পুরো ইউরোপেই এমন, নাকি কিছু দেশে স্বাস্থ্যব্যবস্থা আসলেই ভালো?”
SNS-এর হেল্পলাইন 808 24 24 24 নম্বরে ফোন করেও অনেকেই সময়মতো সেবা পাচ্ছেন না। অনেক সময় ফোন কেটে যায় বা অপারেটর লাইনেই আসে না। এতে জরুরি অবস্থা তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন অনেক প্রবাসী।
প্রবাসীদের বিভিন্ন সংগঠন ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই ভোগান্তির অবসানের দাবি জানিয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তারা বলেন, “প্রবাসীরাও এই দেশের নাগরিক, তাদের স্বাস্থ্য সেবার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।” পর্তুগালে SNS সেবার নানা সীমাবদ্ধতার কারণে স্বাস্থ্য সেবা পেতে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সরকারি উদ্যোগ ও নজরদারি না বাড়লে এই সংকট আরও তীব্র হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা।