গত বছর রোমানিয়া থেকে পাশ্ববর্তী দেশগুলোতে অনিয়মিতভাবে প্রবেশের চেষ্টা করার সময় দেশটির সীমান্ত পুলিশ ২,৩৮৯ জন অভিবাসীকে আটক করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্য রাষ্ট্র রোমানিয়া অনিয়মিত অভিবাসন রোধে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অব্যাহত রয়েছে।
ভিসা নিয়ে রোমানিয়ায় আসা, কিন্তু গন্তব্য পশ্চিম ইউরোপ
রোমানিয়ার সীমান্ত পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, আটক হওয়া অভিবাসীদের প্রায় সবাই বৈধ ভিসা নিয়ে দেশটিতে প্রবেশ করেছিলেন। মূলত ভারত, নেপাল, বাংলাদেশ, ইউক্রেন, সিরিয়া, ইরাক, তুরস্ক, ইথিওপিয়া এবং শ্রীলঙ্কার নাগরিকরা রোমানিয়ায় এসে পরে পশ্চিম ইউরোপের ধনী দেশগুলোতে যাওয়ার চেষ্টা করেন।
বেশিরভাগ অভিবাসী কাজের ভিসা নিয়ে রোমানিয়ায় প্রবেশ করলেও একপর্যায়ে ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যায় বা চাকরি সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যায় পড়েন। এর ফলে তারা অন্য দেশে যাওয়ার পথ খোঁজেন। অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তাদের সঙ্গে জটিলতা বা নিম্নমানের কর্মপরিবেশও এই অনিয়মিত অভিবাসনের অন্যতম কারণ।
সীমান্ত নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি, তবুও পাচার অব্যাহত
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) রোমানিয়ার সীমান্ত পুলিশ তাদের বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে বলা হয়েছে, আটক হওয়া বেশিরভাগ অভিবাসী রোমানিয়া-হাঙ্গেরি সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এছাড়া সার্বিয়া ও বুলগেরিয়া সীমান্তেও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
অভিবাসীদের বেশিরভাগই পাচারকারীদের সহায়তায় সীমান্ত পার হওয়ার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে, সার্বিয়া এখনো ক্রোয়েশিয়া এবং হাঙ্গেরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে প্রধান ট্রানজিট দেশ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
রোমানিয়ায় প্রবেশের চেষ্টাও অব্যাহত
শুধু রোমানিয়া থেকে পশ্চিম ইউরোপে যাওয়ার প্রবণতাই নয়, বরং পাশের দেশগুলো থেকেও বিপুল সংখ্যক অভিবাসী রোমানিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করছে। ২০২৩ সালে মোট ১৮,৩৯৬ জন অনিয়মিত অভিবাসী রোমানিয়ায় প্রবেশের চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছে দেশটির সীমান্ত পুলিশ।
পশ্চিম বলকান রুটে অভিবাসন হ্রাস, কিন্তু রোমানিয়ায় চাপ
ইউরোপের অনিয়মিত অভিবাসন প্রবাহে ২০২৪ সালে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। পশ্চিম বলকান রুটে অনিয়মিত অভিবাসনের হার ৭৮% হ্রাস পেলেও, রোমানিয়ার সীমান্তে অভিবাসীদের আটকের সংখ্যা ইঙ্গিত দেয় যে, কিছু অভিবাসন রুট এখনও সক্রিয় রয়েছে।
রোমানিয়ার অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
রোমানিয়া অনিয়মিত অভিবাসন মোকাবিলায় সীমান্তে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, নিরাপত্তা বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ানো এবং ইইউর সঙ্গে সমন্বয় করে নীতিমালা প্রয়োগের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশটি বলছে, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী করার মাধ্যমে অনিয়মিত অভিবাসন রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব হবে।
অভিবাসন সংকট ও সীমান্ত নিরাপত্তা ইউরোপীয় রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ফলে রোমানিয়া ভবিষ্যতেও এই ইস্যুতে কঠোর নীতি অনুসরণ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।