ইতালিতে নাগরিকত্ব আইন সহজীকরণ ও শ্রমিক অধিকারের গণভোট বাতিল ঘোষণা

italian citizenship referendum void

ইতালিতে নাগরিকত্বের শর্ত সহজ করা এবং শ্রমিকদের অধিকারের উন্নয়নে আয়োজিত গণভোটটি ভোটার উপস্থিতির স্বল্পতার কারণে বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। রোববার শুরু হয়ে সোমবার বিকেল ৩টা (বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টা) পর্যন্ত চলা এই গণভোটে মাত্র ৩০ শতাংশ ভোটার অংশগ্রহণ করেন, যা ৫০ শতাংশ বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হয়েছে।

গণভোটে মোট পাঁচটি প্রস্তাব ছিল, যার মধ্যে অন্যতম ছিল—ইতালিতে নাগরিকত্বের আবেদন করার জন্য বসবাসের সময়সীমা ১০ বছর থেকে কমিয়ে ৫ বছরে নামিয়ে আনা।

এটি ছিল নাগরিকদের একটি স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগ, যেটি বিভিন্ন সিভিল সোসাইটি সংগঠন ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলো সমর্থন করেছিল এবং “হ্যাঁ” ভোট প্রচারে সক্রিয় ছিল। তবে বিশেষ করে সিসিলি ও ক্যালাব্রিয়ার মতো অঞ্চলে ভোটার উপস্থিতি ২২ শতাংশের নিচে নেমে আসে, যা আয়োজকদের জন্য একটি বড় ধাক্কা।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক লরেঞ্জো প্রেগলিয়াস্কো ইতালির স্কাই টিজি২৪-এ বলেন, “ভোটার উপস্থিতি ৩০ শতাংশের নিচে বা উপরে যা-ই হোক না কেন, এটি আয়োজকদের প্রত্যাশার অনেক নিচে।”

গণভোটটিকে অবমূল্যায়ন করে ইতালির কট্টর-ডানপন্থী প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি আগেই জানিয়েছিলেন যে তিনি ভোট বর্জন করবেন। তিনি রোববার রোমের একটি ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করলেও ভোট দেননি এবং ইতালির বর্তমান নাগরিকত্ব আইনকে “চমৎকার” এবং “খুবই উন্মুক্ত” বলে আখ্যা দেন।

অন্যদিকে, আন্দোলনকারীরা যুক্তি দিয়েছিলেন—১০ বছর অপেক্ষা করে নাগরিকত্বের আবেদন করার নিয়ম অত্যন্ত দীর্ঘ এবং এটি ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে। তাই এই সময়সীমা ৫ বছরে নামিয়ে আনার দাবি জানান তারা।

ভোটের ফলাফল ঘোষণার পরপরই প্রধানমন্ত্রী মেলোনির দল ‘ব্রাদার্স অব ইতালি (FdI)’ ইনস্টাগ্রামে বিরোধীদলীয় নেতাদের ছবি পোস্ট করে লিখে, “তোমরা হেরেছো!”
পোস্টটিতে আরও বলা হয়, “এই গণভোটের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মেলোনি সরকারকে ফেলে দেওয়া। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইতালিয়ানরাই তোমাদের ফেলে দিয়েছে।”

ডেমোক্রেটিক পার্টির (PD) পিনা পিচিয়ের্নো এই ফলাফলকে “গভীর, গম্ভীর এবং এড়ানো সম্ভব ছিল এমন পরাজয়” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “৫০% সীমা পূরণ না হওয়া মেলোনি ও ডানপন্থীদের জন্য এক বিশাল উপহার।”

ইতালিতে একটি গণভোট আয়োজনের জন্য প্রায় ৫ লক্ষ স্বাক্ষর প্রয়োজন। তবে এখন এই সংখ্যাটি আরও বাড়ানোর প্রস্তাব উঠেছে যেন অপ্রয়োজনীয় গণভোট রোধ করা যায়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি বলেন, “বিদেশে বসবাসরত ইতালিয়ানদের জন্য লক্ষ লক্ষ ব্যালট পাঠাতে অনেক অর্থ ব্যয় হয়েছে, যা এখন সম্পূর্ণভাবে অপচয় হয়েছে।”

উল্লেখ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিতে ৭৮টি গণভোট অনুষ্ঠিত হয়েছে, যার মধ্যে মাত্র অর্ধেক ভোটই বৈধভাবে বাধ্যতামূলক হয়েছে। প্রথম গণভোটটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালের ২ জুন, যেখানে ৮৯% ইতালিয়ান ভোটার অংশগ্রহণ করেন এবং এর ফলে রাজতন্ত্র বিলুপ্ত হয়ে প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়। পরে গর্ভপাত ও বিবাহবিচার নিয়ে আয়োজিত গণভোটগুলো সফল হলেও সর্বশেষ ২০১১ সালে পানি পরিষেবা ব্যক্তিমালিকানার বিরোধিতায় হওয়া গণভোটটিই ছিল সর্বশেষ বৈধ গণভোট।